ফার্মাসিস্টদের নামের পূর্বে ডাঃ বসাতে দেখা যায় যা বেআইনি: তৌফিক সুলতান 

প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০৪:০৭:৫৪

ফার্মাসিস্টদের নামের পূর্বে ডাঃ বসাতে দেখা যায় যা বেআইনি: তৌফিক সুলতান 

অনলাইন ডেস্ক: ফার্মেসি শুধু একটি শব্দ নয়, এটি স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা।
ফার্মাসিস্ট কোর্স করার নিয়ম :
ফার্মাসিস্ট কোর্স করার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগে? অল্প টাকায় অনেক লাভজনক এবং সম্মানজনক একটি পেশা ফার্মেসি ব্যবসা। যারা ফার্মেসি ব্যবসা করতে চাচ্ছেন বা অলরেডি ফার্মেসি ব্যবসা করছেন তাদের কিছু কাজ সম্পূর্ণ করে নিতে হয়। যেমন:- ড্রাগ লাইসেন্স করা, ফার্মাসিস্ট কোর্স কমপ্লিট করা, ফান্ডিং ম্যানেজ করা ইত্যাদি।

অনেকগুলো কাজ রয়েছে যেগুলো কমপ্লিট করার পর ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করতে হয়। আজকে আপনাদেরকে জানাবো ফার্মাসিস্ট কোর্স করার নিয়ম সম্পর্কে। ফার্মাসিস্ট কোর্স কিভাবে করবেন, ফার্মাসিস্ট কোর্স কোথায় করা যায়, ফার্মাসিস্ট কোর্স করার যোগ্যতা, ফার্মাসিস্ট কোর্স ফি কত ইত্যাদি।

প্রথমে আসি ফার্মাসিস্ট কোর্স কয় ধরনের

ফার্মাসিস্ট কোর্স তিন ধরনের হয়ে থাকে। 
যথা:-
●এ ক্যাটাগরি

●বি ক্যাটাগরি

●সি ক্যাটাগরি

প্রশ্ন আসতে পারে, আপনি কোন ক্যাটাগরি কোর্স করবেন? আপনি যদি ফার্মাসিস্ট কোর্স সম্পূর্ণ করে শুধুমাত্র ফার্মেসির ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনার জন্য সি ক্যাটাগরি কোর্স হলেই চলবে। সি ক্যাটাগরি কোর্সের সার্টিফিকেট বা লাইসেন্স থাকলেই আপনি ঝাই-ঝামেলা ছাড়াই ফার্মেসি ব্যবসা করতে পারবেন।

সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট কোর্স করার নিয়ম?

সি ক্যাটাগরি ফার্মেসি কোর্স ও অন্যান্য ক্যাটাগরি কোর্সের সার্কুলার প্রকাশিত হয় “বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল” থেকে। ঠিকানা : Rahat Tower (4th Floor) 14 Link Road, West Banglamotor, Dhaka 1000 আপনি গুগল করলেও পেয়ে যাবেন বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের অফিস। 

আপনি যদি ফার্মাসিস্ট কোর্স করতে চান তাহলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (http://www.pcb.gov.bd) নজর রাখবেন; কখন সার্কুলার প্রকাশিত হয়।

আগেই বলে রাখি কখনো কখনো ওয়েবসাইটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। এমনটি হলে অপেক্ষা করে পরে পুন: চেষ্টা করবেন।

সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট কোর্সের মেয়াদকাল ৩ মাস। আপনি জানুয়ারি মাসে ভর্তি হলে, মার্চ মাসের মধ্যে আপনার কোর্স সম্পন্ন হয়ে যাবে। কখনো কখনো এর বেশি সময় লাগতে পারে সিরিয়াল পেতে এক বছর সময় ও লাগতে পারে। এরপর বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আরেকটি নতুন ব্যাচ শুরু করবে এবং প্রতি ব্যাচে ১০০জন করে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে কোর্স বন্ধের নোটিশ না আশা পর্যন্ত এভাবেই ৩ মাস পর পর একটি ব্যাচ বের হবে এবং একটি ব্যাচ কোর্স শুরু করবে। এদিক থেকে চিন্তা মুক্ত থাকতে পারেন, আপনি আপনার সুবিধা মতো যেকোনো ব্যাচের সাথে ফার্মাসিস্ট কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।

সি ক্যাটাগরি ফার্মাসিস্ট কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা:

আবেদনকারীকে এসএসসি/ সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
আবেদনকারীর বয়সসীমা ১৭-৫০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
ড্রাগ লাইসেন্স আছে এমন ফার্মেসির মালিক কিংবা ওই ফার্মেসিতে কাজ করে এমন কোন ব্যক্তি।

এ ক্যাটাগরি এবং বি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট কোর্স করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সাইন্স থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করতে হবে। তারপর চার বছর মেয়াদী একটি ডিপ্লোমা কোর্স করার মাধ্যমে এ ক্যাটাগরি/বি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট হতে পারবেন। অন্যদিকে সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট কোর্স তিন মাস মেয়াদি হওয়ায় আপনি যেকোনো গ্রুপ থেকে পাশ করেন না কেন; আপনি এই কোর্স করতে পারবেন। অর্থাৎ সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট কোর্স করার জন্য সাইন্স গ্রুপ বাধ্যতামূলক না। যে কোনো গ্রুপ থেকে এস এস সি পাশ করা ১৭-৫০ বছর বয়সের যে কেউ সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট কোর্স করতে পারবে।

আবেদনপত্রের সঙ্গে নিচের কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবে।

ভর্তির ফর্মের সঙ্গে এস.এস.সি/সমমানের সার্টিফিকেটের ফটোকপি। 
যেই ফার্মেসিতে কর্মরত ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্সের ফটোকপি বা মনোনীত ব্যক্তির নিজের ফার্মেসীর ভাউচারে মালিক কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
সদ্যতোলা ০২ (দুই) কপি পাসপোর্ট সাইজের ল্যাবে প্রিন্ট করা ছবি।
কোর্সের নির্ধারিত ফি (অফেরৎযোগ্য) পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে (ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে পারবেন)। বিজ্ঞপ্তিতে কোর্সের ফি উল্লেখ করা থাকে।

সবথেকে বেশি প্রশ্ন এসে থাকে কোথায় ভর্তি হবেন, কিভাবে ভর্তি হবেন? আপনার উপজেলা বা জেলায় বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট্রি কার্যালয়ে ভর্তি হবেন। ভর্তির বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল দিলেও ভর্তি নিয়ে থাকে বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট কার্যালয়। আপনার উপজেলার বা জেলার বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট্রি কার্যালয়ে যোগাযোগ করবেন। সেখানে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আপনাকে জানাতে পারবে এখন কোন ব্যাচ চলছে এবং কতদিন চলবে।

তারপর আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে ফার্মাসিস্ট কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়াও আপনার এলাকার বা আপনার পরিচিত কোন ফার্মাসিস্টের সাথে কথা বলতে পারেন। যে সি ক্যাটাগরি ফার্মেসি কোর্স করার পর এখন ফার্মেসির ব্যবসা করছে। তার থেকে আপনি বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট কার্যালয়ের ঠিকানা পেয়ে যাবেন। ফার্মাসিস্ট কোর্স করার নিয়ম জানা থাকলেও ভর্তি হওয়ার পূর্বে অবশ্যই কোন অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্টের সাথে আলোচনা করে নিবেন। তাহলে আরও বেশি কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন।

ভর্তি হওয়ার সময় আপনাকে অবশ্যই সাথে করে ড্রাগ লাইসেন্সের একটি ফটোকপি নিতে হবে। ড্রাগ লাইসেন্স আছে এমন ফার্মেসির মালিক কিংবা ওই ফার্মেসিতে কাজ করে এমন কোন ব্যক্তি। অর্থাৎ আপনি কোন ফার্মেসি দোকানের অধীনে এই কোর্সটি করছেন অথবা ঐ ফার্মাসিস্ট আপনাকে সুপারিশ করছে এই কোর্সটি করার জন্য। 

আপনি কি জানেন, আপনার জেলায় ফার্মাসিস্ট কোর্স কোথায় করা যায়? দেশের প্রত্যেকটি জেলায় বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট্রি কার্যালয় রয়েছে। এমনকি আপনার উপজেলায়ও বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট্রি কার্যালয় থাকতে পারে। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রত্যেকটি জেলার বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট্রি কার্যালয়ের লোকেশন দেওয়া রয়েছে। ওয়েবসাইটে একটু ঘাটাঘাটি করলে পেয়ে যাবেন।

সি ক্যাটাগরি ফার্মাসিস্ট কোর্সে কয়টি বই?

৩ মাস মেয়াদী এই সি ক্যাটাগরি ফার্মাসিস্ট কোর্সে শুধুমাত্র ১টি বই পড়তে হয়। সি ক্যাটাগরি ফার্মাসিস্ট কোর্সের বইয়ের নাম হচ্ছে “সহজ ঔষুধবিজ্ঞান”। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল “সহজ ঔষুধবিজ্ঞান” বইটি প্রকাশ করে থাকে। কোর্সে ভর্তি হলে সরাসরি অফিস থেকেই আপনি বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

আপনি যদি ফার্মাসিস্ট কোর্স করতে চান তাহলে আপনাকে মিনিমাম এসএসসি পাস হতে হবে। এছাড়াও কোন একজন ড্রাগ লাইসেন্স এর মালিক এর রেফারেন্স নিতে হবে। একটি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন হবে। এছাড়াও আপনি বর্তমানে কোথায় প্র্যাকটিস করছেন সেই প্রতিষ্ঠানের একটি প্যাড লাগবে।

একজন এমবিবিএস ডাক্তারের সাধারণত যে ধরনের প্রেসক্রিপশন স্লিপ থাকে বা প্যাড থাকে সে ধরনের প্যাডের মধ্যে লিখিত ভাবে ড্রাগ লাইসেন্স ধারণকারীর স্বাক্ষর অঙ্গীকারনামা লাগবে। এই কাগজপত্রগুলো আপনি বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল এর বিভিন্ন শাখা রয়েছে সেখানে জমা দেবেন। আপনার কাগজপত্র যদি তাদের কাছে এলাও হয় তাহলে আপনি এই ফার্মেসি কোর্স করতে পারবেন।

যদি শুধুমাত্র ফার্মাসিস্ট কোর্স করেন তবে চিকিৎসা দিতে পারবেন না। যদি আপনি চিকিৎসা দেন তাহলে আপনি বেআইনী কাজ করছেন। আপনি প্রেসক্রিপশন দেখে ঔষধ বিক্রি করতে পারবেন।

গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এমবিবিএস–বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি সংযোজনের অনুমতি দেওয়া বেআইনি। সেক্ষেত্রে অনেক ফার্মাসিস্টদের নামের পূর্বে ডাঃ বসাতে দেখা যায় যা বেআইনি।

তৌফিক সুলতান,মেডিকেল শিক্ষার্থী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।


প্রজন্মনিউজ২৪/এফএ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ